====== বিশ্বপ্রকৃতি: সর্গ ১ ======
===== ভিনাস বন্দনা =====
ইনিয়াসেরট্রয়ের প্রিন্স, আনখিসেস ও আফ্রোদিতির ছেলে, প্রিয়ামের ভাতিজা, রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা যমজ ভাই রোমুলুস ও রেমুসের পূর্বপুরুষ; এইখানে রোম ও রোমানদের প্রতীক। জননী, মানুষ ও দেবতার চির আনন্দ, ১
বিপুলা ভিনাসকামদেবী যার সাথে আনখিসেসের মিলনে ইনিয়াসের জন্ম। ভিনাসের সাথে প্রেম রণদেব মার্সের যে আবার রোমুলুস-রেমুসের পিতা। এম্পেদোক্লিসের মতে মহাবিশ্বে মৌলিক বল দুইটা, প্রেম ও দ্বন্দ্ব; এখানে ভিনাস প্রেম ও সৃষ্টির প্রতীক আর মার্স দ্বন্দ্ব ও ধ্বংসের প্রতীক। , তুমি স্বর্গের ধীরে চলা সব চিহ্নের
আড়ালে থেকে নিজেকে উজার করো জাহাজ-ভরা সমুদ্রে,
ফসল-ফলানো পৃথিবীতে, কারণ তোমার মাধ্যমে এই
জগতের সব জীব জন্ম নেয় দেখতে দুই চোখ ভরে
সূর্যের আলো; তোমার আগমনেই বাতাস পালায়,
ছত্রভঙ্গ হয় মেঘ; তোমার জন্য নিপুণ পৃথিবী
সাজায় ফুলের ডালি, সমুদ্র হাসে দিগন্তজোড়া হাসি,
আর শান্ত আকাশ ঝলমল করে আলোকের ঝরনায়।
যখন বসন্তের প্রথম দিন দেখায় তার মুখ আর
পশ্চিমের নতুন বাতাস ছড়ায়ে পড়ে সব বাধ ভেঙে,
তখন প্রথমে আকাশের পাখিরা তোমার আগমনি গায়,
দেবী, কারণ তোমার শক্তি ছিন্ন করে তাদের হৃদয়।
তারপর পোষা আর বন্য প্রাণীর দল সবুজ ঘাসের
মাঠে ছুটাছুটি করে ও সাঁতার কাটে খরস্রোতা নদীতে,
তোমার মায়ায় বিমোহিত হয়ে সব তোমার পিছনে ধায়
তুমি যেদিকেই নিয়ে যাও। সাগরে পাহাড়ে ঝরনার স্রোতে,
পাখিদের পাতার বাড়িতে ও শ্যামল প্রান্তরে সকলের
অন্তরে যাদুকরী প্রেম প্রবাহিত করে সব প্রজাতিকে
তুমি নিজেদের মতো নতুন নতুন প্রজন্মের জন্ম
দিতে প্ররোচিত করো।
অতএব যেহেতু কেবল তুমি এই ২১
বিশ্বপ্রকৃতির বিধানকর্তা, যেহেতু তোমাকে ছাড়া
কেউ জন্মাতে পারে না আলোর সৈকতে, তৈরি হয় না
সুখী আর সুন্দর কিছু, সেহেতু কামনা করি তোমাকেই
আমার এ কবিতার সঙ্গী হিসাবে, বিশ্বের প্রকৃতি
বিষয়ে যা লিখতেছি আমি আমার বন্ধু মেম্মিউসেরGaius Memmius, রোমান রাজনীতিবিদ, বক্তা, ছোটখাট কবি, লুক্রেতিউসের বন্ধু, খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ সালে রোমের প্রায়েটর হইছিলেন।
জন্য, যাকে তুমিই, দেবী, সব বর দিয়ে সফল করছ
সব কাজে। অতএব আরো বেশি করে, দেবী, আমার কথায়
ঢালো অমৃত সুধা।
সেই সাথে বিশ্বের জলে আর স্থলে ২৯
যুদ্ধের যত সব হিংস্র যজ্ঞরে দাও ঘুম পাড়ায়ে,
কারণ কেবল তুমি মানুষকে পারো খুশি করতে নীরব
শান্তি দিয়ে, যেহেতু সভ্যতার সকল বর্বতার
যুদ্ধোন্মাদ নেতা মার্সযুদ্ধের দেবতা, ভিনাসের প্রেমিক, বাঙালির 'মঙ্গল'। কবি Mavros ইউজ করছেন সম্ভবত mors (মৃত্যু) শব্দের সাথে মিল করার জন্য, বাংলাতেও 'মার্স' শব্দের মধ্যে 'মার' (মরা) আছে। মাঝেমধ্যেই তোমার প্রেমের
অনির্বাণ আগুনে পরাস্ত হয়ে ঢলে পড়ে তোমারই
কোলে এবং সুঠাম ঘাড় পিছনে এলায়ে হাঁ করে তোমার
মুখের দিকে তাকায়ে তৃপ্ত করে তার তৃষ্ণার্ত চোখ,
শোয়া তার ভারী নিশ্বাস ছুঁয়ে-ছুঁয়ে যায় তোমার অধর।
এভাবে তোমার পূত শরীরে শুয়ে থাকার সময় উপর
থেকে দুই হাতে তাকে জড়ায়ে ধরে ঠোঁট থেকে মধুর কথা
ঝরায়ে চাও তোমার রোমানদের জন্য নীরব শান্তি।
কারণ দেশের এই অরাজকতার মাঝে আমি পারব না
নিশ্চিন্ত মনে আমার অংশ করতে, বা মেম্মিউস
বংশের এ মহান সন্তান পারবে না এমন সময়ে
দশের মঙ্গলের কাজে অবহেলা করতে।
তুমি পারবা ৪৪
কারণ দেবতাদের প্রকৃতি এমন যে তারা অনন্ত
জীবন যাপন করে চূড়ান্ত শান্তিতে আমাদের সব
কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে অনেক দূরে; কারণ বেদনা
ছাড়া, বিপত্তি ছাড়া, শুধু আপন শক্তিতে শক্তিমান
তাদের কিছু লাগে না আমাদের থেকে; তারা প্রসন্ন হয়
না ইবাদতে বা ক্ষুণ্ণ হয় না বিদ্রোহে।
===== মেম্মিউসের প্রতি =====
বাকিটা সময়, ৫০
তোমার সজাগ কান আর মনোযোগী মন সব পিছুটান
ভুলে নিয়োজিত করো সত্য দর্শনে, যাতে বিশ্বস্ত
ব্যাকুলতায় বানানো আমার এ উপহার বুঝার আগেই
তাচ্ছিল্যের সাথে ফেলে না দাও। কারণ তোমার জন্য
আমি এখন বলব দেবতা ও স্বর্গের সবচেয়ে উঁচু
জগতের কথা, বলব সবার আদিম উপাদানের কথা,
যার থেকে প্রকৃতি সব জিনিস বানায়, বড় করে আর
লালন করে, এবং যার মাঝে বিলয়ের পরে সবকিছু
আবার বিলায়ে দেয়, যাকে দর্শন আলোচনার সময়
আমরাই ডাকি মৌলিক পদার্থ, সঞ্জননী বস্তু,
সর্বজনীন বীজ, আর প্রথম জিনিস, যেহেতু এদের
থেকেই সকল কিছুর সৃষ্টি।
মানুষের জীবন যখন ৬২
সবখানে সকলের চোখের সামনে মাটিতে দলতেছিল
ধর্মের ভয়ানক ভারে---যে স্বর্গ থেকে মাথা বের করে
নশ্বর মানুষের দিকে তাকাত ভয়ংকর মুখ করে---
তখন প্রথম এক গ্রিকএপিকুরোস / Epicurus (খ্রিস্টপূর্ব ৩৪১-২৭০, এথেন্স) গ্রিক দার্শনিক যার পরমাণুবাদ কবি এখানে প্রচার করতেছেন প্রথমবারের মতো লাতিন কাব্যে। তার দিকে নশ্বর চোখ তুলে
তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াইছিল, কারণ কোনো দেবতার
পৌরাণিক কাহিনি বা বিদ্যুৎ বা বজ্রের হুঙ্কার
কিচ্ছু তাঁকে দমাইতে পারে নাই, উল্টা তাঁর আত্মার
নির্ভীক উৎসাহ আরো উস্কে দিছিল, যার ফলে তিনি
মানুষের মধ্যে প্রথম ভাঙছিলেন দুনিয়ার বন্ধ
দুয়ারের অর্গল। এইভাবে জিতছিল তাঁর চেতনার
সতেজ শক্তি, তিনি পার হয়ে গেছিলেন মহাবিশ্বের
প্রজ্জ্বলিত প্রাচীর, চিন্তা আর কল্পনায় বিচরণ
করছিলেন অসীম অমিত সমগ্রেরomni, যা-কিছু আছে সব, শুধু ইউনিভার্স না এর বাইরেও যদি কিছু থাকে সবকিছু একসাথেই অম্নি বা সমগ্রের মধ্যে পড়বে। আনাচে কানাচে,
জয় শেষে ফিরে এসে পুরস্কার হিসাবে জানাইছিলেন
কোন জিনিস অস্তিত্ব নিতে পারে কোন জিনিস পারে না,
এক কথায় কিভাবে সব জিনিসের শক্তি সীমাবদ্ধ
সুগভীর সনাতন সীমান্তরেখা দিয়ে। অতএব আজ
উল্টা সংস্কার দলতেছে পদতলে আর তাঁর জয়লাভ
আমাদের নিয়ে গেছে স্বর্গের সমতলে।
তবে ভয় হয়৮০
তুমি হয়ত ভাববা দর্শন পাঠ পাপ আর এই পথে
চলে আমরা যাচ্ছি অপরাধ জগতে। হতেই পারে না,
বরং কুসংস্কার তৈরি করছে বেশি অপরাধ পাপ:
ভেবে দেখো, আউলিসে দেবী ত্রিভিয়ারTrivia রাস্তার মোড়ের দেবী, Hecate বা আর্তেমিস-ডায়ানা দুই দেবীকেই অনেক সময় ত্রিভিয়া এপিথেট দেয়া হয়। আর্তেমিসকে তুষ্ট করতেই তার বেদিতে ইফিগেনিয়াকে বলি দেয়া হইছিল। বেদি ইফিগেনিয়ারIphigenia ট্রয়ের যুদ্ধে গ্রিসের রাজা আগামেমননের মেয়ে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে গ্রিক নৌবহর আউলিস বন্দরে অপেক্ষা করতেছিল অনুকূল বাতাসের অপেক্ষায়। বাতাস আসতেছিল না কারণ গ্রিক সৈন্যরা দেবী আর্তেমিসের পশু বধ করছিল। দেবীর অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য সৈন্যরা রাজাকে বাধ্য করে তার আপন মেয়েকে আর্তেমিসের উদ্দেশে বলি দিতে। একিলিসের সাথে বিয়ে দেয়া হবে এই মিথ্যা বলে ইফিগেনিয়াকে কুরবানির যজ্ঞে নিয়ে যাওয়া হয়।
রক্ত দিয়ে কিভাবে কলুষিত করছিল গ্রিক জনতার
নির্বাচিত নেতারা। কুমারী চুলে যখন বাঁধা হইছিল
দুই গাল ছুঁয়ে গড়ায়ে পড়া সমান দৈর্ঘের দুই ফিতা,
যখনি সে দেখছিল বেদির সামনে তার পিতার করুণ
মুখ, পাশে ধার ছুরি আড়াল করে দাঁড়ানো সব পুরোহিত
আর সম্মুখে তাকে দেখে অশ্রু ঝরানো হাজার মানুষ
তক্ষুনি বোবা আতঙ্কে দুই হাঁটু গেড়ে ঢলে পড়ছিল
মাটিতে। তখন অভাগিনীর এটা কোনো কাজে আসে নাই যে
রাজাকে প্রথম বাবা নামটা সে-ই দিছিল; পুরুষের হাত
থরথর কম্পিত মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেছিল বেদিতে,
পবিত্র ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে হাইমেনের গীত
কেউ গায় নাই, বরং বিয়ের বয়সী এক পরিষ্কার
কুমারীকে কুরবানি করা হইছিল খুব কদর্যভাবে
নিজের বাবার হাত দিয়ে, শুধু যাতে গ্রিক নৌবহরের
জন্য ট্রয়ের দিকে অনুকূল বাতাস বহে। কুসংস্কার
এমনই অশুভের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
হয়ত তুমিও১০২
একদিন আমাদের ছেড়ে চলে যাবা পুরোহিতদের ভয়ে
ভরা নসিহত শুনে। আরে ওরা এক্ষুনি এমন অনেক
স্বপ্ন বানায়ে দিতে পারবে যাতে তোমার জীবনের ছক
ছত্রভঙ্গ হয়, ভাগ্যের জায়গা দখল করে ভয়।
পারবে নাই বা কেন! মানুষ যদি জানত সব কষ্টের
সীমা আছে তাহলে যাজকদের কুসংস্কার বা হুঙ্কার
পরোয়া না করার শক্তি পেত, কিন্তু বাস্তবতা হল
প্রতিরোধের ক্ষমতা কারোই নাই, কারণ আছে পরকালে
অনন্ত শাস্তির শঙ্কা। কারণ মানুষের অজ্ঞতা
আছে আত্মার প্রকৃতি নিয়ে, এইটা কি জন্মের সাথে
জন্মায় নাকি জন্মের সময় বাইরে থেকে দেহে ঢুকে,
মৃত্যুর মাধ্যমে দেহ ভেঙে গেলে নাই হয়ে যায় নাকি
অর্কুসের অন্ধকারে গহীন গুহায় ঘুরাঘুরি করে
নাকি দৈবের বশে প্রবেশ করে অন্য প্রাণীদের দেহে,
যেমন গেয়ে গেছেন আমাদের এন্নিউসEnnius (খ্রিস্টপূর্ব ২৩৯-১৬৯) রোমান কাব্যের জনক, লাতিন সাহিত্যের আদিকবি।, যিনি প্রথম
মনোরম হেলিকন থেকে চিরহরিৎ পাতার মালা এনে
গৌরব কুড়াইছিলেন ইতালির সব গোষ্ঠীর কাছে,
অথচ এই তিনিই অমর গানে গেলেন বলে, আছে নাকি
আকেরনেরAcheron গ্রিসের এপিরুস অঞ্চলের নদী যার একটা শাখা পাতালে চলে গেছে বলে লোকে বিশ্বাস করত, সাহিত্যে এটা গ্রিক পাতালের পাঁচ নদীর একটা, ক্যারন যার খেয়ামাঝি, দান্তে এই নদীকে জাহান্নামের প্রবেশমুখ হিসাবে দেখাইছেন। এমন অঞ্চল যেইখানে টিকতে পারে না
আমাদের আত্মা বা দেহ, তবে পারে তাদের মতো দেখতে
অদ্ভুত পাণ্ডুর কিছু জিনিস, এবং এখান থেকেই
নাকি অবিনশ্বর হোমারের ছায়া জেগে নোনতা অশ্রু
ঝরাতে ঝরাতে তার কাছে প্রকাশ করতে শুরু করছিল
বিশ্বের প্রকৃতি।
সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই ১২৭
ফুটায়ে তুলতে হবে গগনের গতিবিধি, কিভাবে সূর্য
আর চাঁদ ঘুরে, বলতে হবে কিভাবে ভুবনের সবকিছু
কাজ করে, তবে সবচেয়ে বেশি দরকার সূক্ষ্ম যুক্তি
দিয়ে যাচাই করা আত্মা কি দিয়ে তৈরি, মনের স্বভাব
কেমন, আর কী সেই জিনিস যা রোগের সময় আমাদের
মনকে আতঙ্কিত করে, গভীর ঘুমের সময় এমন
ভাবে ভর করে যে মনে হয় এমন কাউকে দেখতেছি বা
শুনতেছি যে আসলে মারা গেছে বহু আগে, যার হাড়গোড়
চুরমার হয়ে গেছে ভূমির আলিঙ্গনে।
অবশ্য বুঝি১৩৬
গ্রিকদের নিগূঢ় আবিষ্কার লাতিন কবিতায় প্রকাশ
করা অনেক কঠিন, বিশেষ করে যেহেতু নতুন শব্দ
বানাতে হয় অনেক, কারণ আমাদের এ ভাষা দরিদ্র
এবং বিষয়টাও নতুন, তবু তোমার মেধা ও তোমার
বন্ধুত্বের আসন্ন আনন্দ আমাকে রাজি করাল
এ পরিশ্রম মানতে, এই সব শান্ত রাত জেগে-জেগে
খুঁজতে সেই সব শব্দ আর কাব্য যা দিয়ে অবশেষে
তোমার মনে জ্বালতে পারব পরিষ্কার আলো যাতে তুমি
বস্তুর অন্তর দেখতে পারো।
===== প্রথম সূত্র =====
মনের এই আতঙ্ক ১৪৬
আর এই কুহেলিকা দূর করতেই হবে, তবে সূর্যের
কিরণ বা দিনের উজ্জ্বল রশ্মি দিয়ে না, প্রকৃতির
স্বরূপ আর সূত্র দিয়ে। এবং প্রথম সূত্র আমরা
নিব এই সাধারণ নীতি থেকে যে **শূন্য থেকে দৈবের**
**বলে কখনোই কোনকিছু তৈরি হয় না**। একটা বিশাল
আতঙ্কের আঁচলে সব মানুষ আটক, কারণ স্বর্গে
মর্তে তারা এমন অনেক কিছু ঘটতে দেখে যার কোনো
কারণ দেখতে পায় না এবং তাই ভেবে বসে সেই সব
ঘটতেছে দৈবের শক্তিতে। অতএব আমরা যখন
দেখব শূন্য থেকে কিছু বানানো যায় না তখন অনেক
সঠিকভাবে চিনতে পারব সেই উৎস যার মাধ্যমে
সব জিনিস বানানো যায় এবং বুঝতে পারব কিভাবে
দেবতাদের প্রভাব ছাড়া সবকিছু ঘটে।
কারণ শূন্য ১৫৯
থেকে কিছু জন্মাতে পারলে সবকিছু থেকেই সবকিছু
তৈরি করা যাইত, কারো কোনো বীজ লাগত না। প্রথমত
সাগর থেকে মানুষ, মাটি থেকে আঁশওয়ালা মাছ বের হতো,
আকাশে বাচ্চা হতো পাখির; গবাদি পশু আর প্রত্যেক
ধরনের বন্য জন্তু দিয়ে সমানভাবে ভরে যাইত
মরুভূমি ও আবাদি জমি, কারো জন্মের ঠিক থাকত না।
তাছাড়া একই গাছ সব সময় একই ফল ফলাত না,
একেক বার একেক ফল দিত, সব গাছে সব ফল পাওয়া
যেত। প্রত্যেক জাত তৈরির আলাদা বীজ যদি নাই থাকে
তবে সবার অপরিবর্তনীয় ধ্রুব মাতা কেমনে থাকে?
তাই আসলে যেহেতু সবাই নির্ধারিত বীজ থেকে আসে
সেহেতু যা কিছু জন্ম নিয়ে এই আলোর সৈকতে ভাসে
তাদের সবার উৎসের মাঝেই নিহিত আছে নিশ্চিত
তাদের মৌলিক পদার্থ, প্রথম অঙ্কুর। অতএব
সবকিছু থেকে সবকিছু জন্মায় না কারণ প্রত্যেক
বস্তুর ভিতরে আছে অনন্য ক্ষমতা।
তাছাড়া গোলাপ ১৭৪
কেন শুধু বসন্তে ফুটে, শস্য গ্রীষ্মে, আর আঙ্গুর
শরতের ষড়যন্ত্রে যদি না তাদের নির্ধারিত বীজ
নির্দিষ্ট সময়ে একত্রিত হলেই কেবল নতুন
সৃষ্টি উন্মোচিত হয়, বা যদি উপযুক্ত ঋতু ও সজীব
পৃথিবী নতুন ও নরম বাচ্চাগুলাকে আলোর বেলায়
নিরাপদে নিয়ে না আসে? শূন্য থেকে যদি এরা জন্মাতে
পারত তবে তো চলে আসত হঠাৎ একেক বার একেক
সময় বা বছরের প্রতিকূল ঋতুতে; কারণ সেক্ষেত্রে
এমন কোনো আদিম বীজ থাকত না যাকে প্রতিকূল ঋতু
সৃজনশীল মিলন থেকে ফিরাইতে পারে।
তাছাড়া সময় ১৮৪
লাগত না কারো বড় হতে বা নিজের বীজ জমাইতে যদি
শূন্য থেকে বৃদ্ধি সম্ভব হতো; কারণ তখন কচি বাচ্চা
চোখের নিমিখে হয়ে যেত যুবতী, ঘাসের চাপড়া থেকেই
ফুস করে ফুঁড়ে উঠে যেত বিরাট বৃক্ষ। তবে নিশ্চয়ই
এসব কিছুই ঘটে না বরং সবকিছু ধীরে ধীরে বাড়ে
নির্ধারিত বীজ থেকে ও বাড়ার সময় যার যার জাত
সংরক্ষণ করে; তাই বুঝতেই পারতেছ প্রত্যেকে
বড় হয় এবং পুষ্টি পায় তার নিজের মানানসই
কাঁচামাল থেকে।
এর সাথে যোগ করো প্রতি বছর বর্ষা ১৯২
কাল না আসলে এই পৃথিবী তার মজার ফলের বাহার
আনতে পারে না, আর খেতে না পারলে কোনো প্রাণী সন্তান
জন্ম দিয়ে বংশ রক্ষা করতে পারত না; সুতরাং
সহজেই বিশ্বাস করা যায় যে সকল কিছুর মধ্যে
কমন কিছু মৌল পদার্থ আছে ঠিক যেমন অনেক
শব্দের মধ্যে কমন কিছু অক্ষর থাকে, আর এটা
কিছুতেই বিশ্বাস কইরো না যে আদিম উপাদান ছাড়া
কারো অস্তিত্ব সম্ভব।
এবং প্রকৃতি কেন এমন ১৯৯
বড় মানুষ বানাতে পারে নাই যে বিশাল সাগর হেঁটেই
পার হতে পারে, বিরাট পাহাড় হাত দিয়ে চুরমার করে
দিতে পারে, আর সময়কে হারায়ে অনেক প্রজন্ম ধরে
বেঁচে থাকে? পারে নাই কারণ সবার আছে সুনির্ধারিত
উপাদান যার থেকে কি জন্মাতে পারবে তাও আগে থেকে
ঠিক করে দেয়া আছে। অতএব আমাদের মানতেই হবে
শূন্য থেকে সৃষ্টি করা অসম্ভব, কারণ সকলের
সুস্থির বীজ লাগে যা থেকে প্রত্যেক জীব জন্ম গ্রহণ
করে মর্তের মন্দ হাওয়ায়।
শেষে বলতে চাই, যেহেতু ২০৮
চাষ-না-করা জমির চেয়ে চাষ-করা জমি বহুগুণে ভালো
এবং হাতের শ্রমে দেয় অনেক বাড়তি ফলন, সেহেতু
বুঝাই যায় মাটিতে সে আদিম উপাদান আছে যা আমরা
জীবন্ত করি লাঙ্গল দিয়ে উর্বর মাটি উল্টায়ে
আর ভিজা সব ঢেলা দলাইমলাই করে। যদি না থাকত
তাহলে দেখতা আমাদের শ্রম ছাড়া সবকিছু স্বেচ্ছায়
আরো ভালো বড় হতো।
===== দ্বিতীয় সূত্র =====
এর সাথে যোগ করো যে **প্রকৃতি**২১৫
**সবকিছু তাদের আদিম উপাদানে বিলীন করে, কিন্তু**
**কোনকিছুই শূন্য করে দেয় না**। কারণ কোনকিছুর সকল
অংশ যদি ধ্বংস করা যেত তবে সবকিছু একসাথে
এক নিমিখে চোখের সামনে থেকে হয়ে যেত অদৃশ্য;
কারণ কারো অংশগুলার মাঝে সংযোগ বিচ্ছিন্ন
করে তাকে শতচ্ছিন্ন করে দিতে কোনো বল লাগত না।
কিন্তু ঘটনা হল সবকিছুর বীজ অনন্ত হওয়ায়
প্রকৃতি কারো ধ্বংস দেখতেই দেয় না যতক্ষণ না
পর্যাপ্ত বড় কোনো বল তাকে বাহির থেকে বিচূর্ণ
বা ভিতরের ভয়েডে ঢুকে বিদীর্ণ করে।
তাছাড়া সময় ২২৫
বছরের ব্যবধানে যা-কিছু সরায়ে নেয় সব যদি পুরা-
পুরি সাবাড় করেই দিত তাহলে ভিনাস আবার কি দিয়ে
প্রত্যেক প্রজাতির নতুন সৃষ্টি আনে প্রাণের আলোতে
আর জন্মের পরে নিপুণ পৃথিবী প্রতি জাতের শিশুকে
কোথা থেকে তার তার মতো খাদ্য পুষ্টি দিয়ে বড় করে?
ভিতরের সব ঝরনা আর বাহিরে বহু দূর হতে আসা
নদনদী কোত্থেকে পানি এনে বারবার সাগর পূর্ণ
করে? ইথার কেমনে পালে তারার পাল? নশ্বর শরীর
দিয়ে যে তৈরি তার তো বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা অনাদি
অতীত কালের শূন্য গর্ভে। তবে এই অসীম সময়
ধরে যদি এমন জিনিস থেকে থাকে যা থেকে এ সবকিছু
বারবার পাইছে জীবন তবে সে জিনিস নিঃসন্দেহে
অবিনশ্বর। অতএব কোনকিছু সম্পূর্ণ শূন্য
হয়ে যাইতে পারে না।
আবার এই একই বল বা কারণ ২৩৮
কোনো বাছবিচার ছাড়া সব ধ্বংস করে দিত যদি সেই
শাশ্বত পদার্থ তাদের অংশগুলা অন্তরঙ্গ
এক বাঁধনে নিবিড়ভাবে বেঁধে না রাখত, কারণ একটা
স্পর্শই যথেষ্ট হতো ধ্বংসের জন্য যদি অমর
উপাদানের এমন কোনো কণা না থাকত যাদের বুনন
ভাঙতে হলে বিশেষ রকমের বল লাগে। কিন্তু ব্যাপার
হলো একেক মৌল একেক বন্ধনে বাঁধা এবং তাদের
উপাদান অবিনাশী, সবাই ততক্ষণ তাই অক্ষত
থাকে যতক্ষণ না তাদের পদার্থের বুনন ভাঙার
মতন শক্তিশালী কোনো বল আসে। সুতরাং কোনকিছু
একা একা শূন্য হয়ে যেতে পারে না, সবকিছু ভাঙনের
পরে মৌলিক উপাদান হয়ে যায়।
পরিশেষে, বৃষ্টির ২৫০
ফোঁটা পিতা ইথারের তল থেকে মাতা পৃথিবীর গোল কোলে
পড়ার সাথে-সাথেই নাই হয়ে যায়, কিন্তু তাহার পরে
উজ্জ্বল ফসল জাগে, গাছের শাখা হয় সবুজ, গাছ আরো
বড় হয়ে ভারী হয় ফলের ভারে, এসব থেকে পুষ্টি ও
খাবার পাই আমরা আর সব বন্যেরা, এতে আমাদের
বানানো আনন্দের নগরে ফুটে ফুলের মতো শিশু আর
পাতাঘেরা বন মুখরিত হয় নবাগত পাখিদের গানে;
গবাদি পশুর পাল চর্বির ভারে হেলে দুলে শুয়ে থাকে
সবুজ ঘাসের মাঠে, তাদের ফোলা স্তন থেকে সাদা দুধের
ফোয়ারা ছোটে, এবং তাতে বাছুরের দল নমনীয় ঘাসে
অস্থি'র দুর্বল সন্ধি নিয়ে খেলায় মাতে, নির্জল কড়া
দুধে এত অস্থির হয় তাদের হৃদয়। অতএব কোনো
দৃশ্যমান বস্তু সম্পূর্ণ শূন্য হয় না, কারণ
প্রকৃতি এক জিনিস দিয়ে আরেক জিনিস বানায় এবং
এক জনের মৃত্যু ছাড়া আরেক জনের জন্ম কখনো
হইতে দেয় না।
==== পরমাণুর প্রমাণ ====
এতক্ষণ যেহেতু শিখাইলাম শূন্য২৬৫
থেকে কিছুই সৃষ্টি করা যায় না এবং জন্মের পরে
কোনকিছুই শূন্যে ফিরায়ে নেয়া যায় না, আশা করি তুমি
আমার কথা মানবা, তবে ভয় হয় অবিশ্বাস করতে
পারো কারণ আদিম উপাদান খালি চোখে দেখাই যায় না,
তাই এখন এমন কিছু জিনিসের কথা বলব যেগুলা
নিঃসন্দেহে আছে কিন্তু দেখা যায় না।
প্রথমে বাতাস২৭১
নিয়ে কথা বলি: ঝড় ঠিকঠাক জমে উঠলে সমুদ্রের
গায়ে চাবুক মারে, জাহাজ উল্টায়, তাড়ায়ে বেড়ায় মেঘ,
কখনো প্রবল ঘূর্ণিঝড় পাহাড়ের উপর থেকে গাছ
উপড়ায় ভয়ানক আঘাতে এবং সমতলের উপর
দিয়ে প্রচণ্ড বেগে যাওয়ার সময় গাছগুলা আছড়ায়ে
মারে মাটিতে; এত ভয়ংকর হিংস্র ঝড়ের হুঙ্কার,
এত বর্বর তার গর্জন। তাই বাতাস অবশ্যই
দেখা যায় না এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি যারা সাগর
আর ভূমি একসাথে ঝেড়ে সাফ করে, আকাশের মেঘকেও
ছাড়ে না, হঠাৎ কোনো হারিকেনে বন্দি করে উড়ায়ে নিয়ে
যায় বহু দূরে। এদের চলার ধারা ও ধ্বংসের ক্ষমতা
ঠিক পানির মতন, পানি অনেক কোমল হলেও হঠাৎ
উপচায়ে পড়া স্রোতে ছুটে চলে যখন উঁচু পাহাড় থেকে
নেমে আসে বিপুল পরিমাণ জল, আর ভারী বৃষ্টির
মুষলধারায় আরো উথলে উঠে বন্যা, গোটা বন আর
অগণিত গাছ তুলে নিয়ে যায় ধ্বংসস্তূপের মতন,
পাহাড়ি পানির এই আচানক চাপ সহ্য করতে পারে
না কোনো সেতু, এমন বিশাল শক্তি নিয়ে ফুটন্ত নদী
আছড়ায়ে পড়ে মোটা স্তম্ভে, গম্ভীর গর্জনের সাথে
আগায়ে যায় ধ্বংস হাতে, ঢেউয়ের তলায় বিরাট বিরাট
পাথর গড়ায়ে নিয়ে চলে, পথে যাই পড়ে তাই নেয়
ভাসায়ে। সুতরাং বাতাসের ঝঞ্ঝা নিশ্চিত এভাবেই
কাজ করে, প্রমত্তা নদীর মতো যেদিকে যায় সেদিকেই
সব ঝেড়ে সাফ করে মুহুর্মুহু আঘাতে এবং কখনো
ঘূর্ণিপাকের ঘেরে জিনিসপত্র বন্দি করে ঘুরাতে
ঘুরাতে কোনো ক্ষিপ্র টর্নেডোর নাভিতে করে নিয়ে চলে।
তাই আমি বার বার বলতেছি বাতাসেরও অদৃশ্য
পদার্থ আছে, যেহেতু কাজে কর্মে তার প্রতিদ্বন্দ্বী
মস্ত সব নদী যাদের পদার্থ দেখা যায়।