সোলার উইন্ডের বো শকের পিছনে ম্যাগ্নেটোশিথে যেসব শকড পার্টিকেল থাকে তারা পৃথিবীর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের ভিতরে সহজে ঢুকতে পারে না। কারণ ইন্টারপ্ল্যানেটারি ফিল্ড লাইন আমাদের টেরেস্ট্রিয়াল ফিল্ড লাইন ভেদ করতে পারে না, এবং সোলার উইন্ডের কণাগুলি ইন্টারপ্ল্যানেটারি ফিল্ড লাইনের খপ্পর থেকেও বের হতে পারে না। সোলার উইন্ডে প্লাজমা অনেক কন্ডাক্টিং হওয়াতে এখানের পার্টিকেল ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড লাইনের মধ্যে ‘ফ্রিজ’ হয়ে যায়।
দুইটা আলাদা অঞ্চলের মধ্যে বাউন্ডারির নাম ম্যাগ্নেটোপজ এবং প্ল্যানেটের চুম্বকক্ষেত্র সোলার উইন্ডে যে ক্যাভিটি তৈরি করে তার নাম ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ার। সোলার উইন্ডের কাইনেটিক প্রেশার পৃথিবীর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডকে বিকৃত করে ফেলে, তার ডেসাইড সংকুচিত হয়, আর নাইটসাইড প্রসারিত হয়ে ম্যাগ্নেটোটেইল তৈরি করে যা চাঁদের অর্বিট ছাড়িয়ে যায়।
ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের প্লাজমায় থাকে মূলত ইলেক্ট্রন আর প্রোটন। এদের কিছু সোলার উইন্ড থেকে আসে আর কিছু পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ার থেকে। তবে আয়নোস্ফিয়ার থেকে কিছু He$^+$ আর O$^+$ আয়নও পাওয়া যায়, এবং সোলার উইন্ড থেকে আসে কিছু He$^{++}$ আয়ন। এই প্লাজমা ইউনিফর্ম ভাবে থাকে না, একেক জায়গায় ডেন্সিটি ও টেম্পারেচার একেক রকম।
দুই থেকে ছয় আর্থ-রেডিয়াসে পৃথিবীর ডাইপোলার ফিল্ড লাইন বরাবর আছে আমাদের রেডিয়েশন বেল্ট। এখানে হাই এনার্জির অনেক ইলেক্ট্রন ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড লাইন ধরে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে অসিলেট করে। এখানে ইলেক্ট্রনের নাম্বার ডেন্সিটি প্রতি সিসিতে ১, টেম্পারেচার আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন কেলভিন, আর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের শক্তি ১০০ থেকে ১০০০ ন্যানোটেসলা।
নাইটসাইডে যে ম্যাগ্নেটোটেইল আছে তার বেশির ভাগ প্লাজমা ম্যাগ্নেটিক ইকুয়েটরের কাছাকাছি অঞ্চলে একতা প্লাজমা শিট তৈরি করে যার থিকনেস প্রায় ১০ আর্থ-রেডিয়াস। পৃথিবীর কাছে এই শিট একেবারে অরোরাল আয়নোস্ফিয়ার পর্যন্ত নেমে আসে। এখানে গড়ে ইলেক্ট্রনের ডেন্সিটি প্রতি সিসিতে ০.৫, টেম্পারেচার প্রায় ৫ মিলিয়ন কেলভিন, আর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের শক্তি প্রায় ১০ ন্যানোটেসলা।
ম্যাগ্নেটোটেইলের বাইরের অংশকে বলে লোব। এখানে ইলেক্ট্রনের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা অনেক কম। ইলেক্ট্রনের নাম্বার ডেন্সিটি প্রতি সিসিতে মাত্র ০.০১, টেম্পারেচার ৫ লাখ কেলভিন, আর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের শক্তি ৩০ ন্যানোটেসলা।
ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের প্লাজমা স্থির থাকে না, বাইরের বিভিন্ন প্রভাবে মুভ করে। অনেক সময় সোলার উইন্ডের মতোই ইলেক্ট্রন ও আয়ন একসাথে মুভ করে। কিন্তু কখনো ইলেক্ট্রন ও আয়ন বিপরীত দিকে মুভ করতে পারে, এবং এক্ষেত্রেই ইলেক্ট্রিক কারেন্ট তৈরি হয়, যা এই অঞ্চলে চার্জ, ম্যাস, মোমেন্টাম, এনার্জি, ইত্যাদি পরিবহনের জন্য খুব জরুরি। এই কারেন্ট থেকে তৈরি ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড আবার ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের ফিল্ড অনেক পাল্টে দিতে পারে। কিছু কারেন্ট নিচের ফিগারে দেখানো হয়েছে।
পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের প্রতিটা বিকৃতির সাথেই একটা করে কারেন্ট যুক্ত আছে। যেমন, ডেসাইডে সংকোচনের সাথে জড়িত কারেন্ট ম্যাগ্নেটোপজের সার্ফেসে প্রবাহিত হয় বলে এর নাম ম্যাগ্নেটোপজ কারেন্ট। একইভাবে নাইটসাইডের লেজের সার্ফেসে প্রবাহিত হয় টেইল কারেন্ট, আর মাঝখানের প্লাজমা শিটে থাকে নিউট্রাল শিট কারেন্ট। এই টেইল কারেন্ট ও শিট কারেন্ট আসলে সংযুক্ত এবং সূর্যের সাথে পৃথিবীকে যুক্ত করা লাইন থেকে তাকালে এদের যৌথ কারেন্ট দেখতে গ্রিক লেটার $\Theta$-র মতো লাগে।
ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের ভিতরের অংশ গঠনে বড় ভূমিকা রাখে রিং কারেন্ট। এই কারেন্ট পৃথিবীর চারদিকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় পৃথিবী থেকে কয়েক আর্থ-রেডিয়াস দূরত্বে। রেডিয়েশন বেল্টের পার্টিকেল এই কারেন্টের ক্যারিয়ার। উত্তর থেকে দক্ষিণে বাউন্স করার পাশাপাশি এসব পার্টিকেল পূর্ব-পশ্চিমে ড্রিফট করে। প্রোটন পশ্চিমে ড্রিফট করে আর ইলেক্ট্রন পূর্বে ড্রিফট করে, এ কারণে চার্জের একটা নেট ট্রান্সপোর্ট ঠিকই ঘটে।
পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ারের পরিবাহী লেয়ারে অনেকগুলো কারেন্ট আছে ১০০-১৫০ কিমি এল্টিচুডের মধ্যে। উল্লেখ করার মতো কারেন্টের মধ্যে আছে অরোরাল ওভালের ভিতরে চলা অরোরাল ইলেক্ট্রোজেট, ডেসাইডে মাঝামাঝি এল্টিচুডে থাকা এসকিউ কারেন্ট, এবং ম্যাগ্নেটিক ইকুয়েটরের কাছে ইকুয়েটরিয়াল ইলেক্ট্রোজেট।
এতক্ষণ যেসব কারেন্ট নিয়ে কথা হলো তাদের দিক ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের সাথে পার্পেন্ডিকুলার। কিন্তু ফিল্ড লাইন বরাবর চলা কারেন্টও আছে। যেমন, ইলেক্ট্রনের প্রবাহ থেকে তৈরি বিভিন্ন ফিল্ড-এলাইন্ড কারেন্ট ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের কারেন্টকে আয়নোস্ফিয়ারের মেরু অঞ্চলের কারেন্টের সাথে যুক্ত করে।