Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


স্পিনোজা

স্পিনোজা ১৭–১৮ শতকে ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক। তার প্রধান বই ‘থিওলজিকেল-পলিটিকেল ট্রিটিজ’ (১৬৭০, নেদারল্যান্ড) এবং ‘এথিক্স’ (১৬৭৭, নেদারল্যান্ড)। ‘এথিক্সে’ তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতিক মেথডে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে গড আছেন এবং এই গডকে জানার চেষ্টা করাই মানুষের জন্য সর্বোত্তম গুড। তার মতে গড ও নেচার (খোদা ও প্রকৃতি) এক।

spinoza_nicolas_dings_zwanenburgwal_amsterdam.jpg

এথিক্স ১: খোদা ও প্রকৃতি

‘এথিক্সের’ প্রথম খণ্ডে স্পিনোজা খোদার সংজ্ঞা দেন, অস্তিত্ব প্রমাণ করেন ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেন। এটা বুঝতে হলে এরিস্টটল থেকে দেকার্ত পর্যন্ত ইউরোপিয়ান দর্শনে সাবস্টেন্স, এট্রিবিউট ও মোডের অর্থ বুঝতে হবে। এরিস্টটলের মতে সাবস্টেন্স তাই যা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, আর এট্রিবিউট সাবস্টেন্সের উপর নির্ভরশীল। যেমন ‘মানুষ’ ধারণাটা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, তাই এটা সাবস্টেন্স। কিন্তু ‘ওজন’ সব সময় কিছু একটার ওজন, যে কিছু একটা হলো সাবস্টেন্স, তাই ওজন এক ধরনের এট্রিবিউট। দেকার্ত এর সাথে যোগ করেন, অসংখ্য সাবস্টেন্সের অসংখ্য পরিবর্তনশীল প্রপার্টি থাকলেও একটা প্রপার্টি কখনো পাল্টায় না: একটা সাবস্টেন্স দেহ হলে তার থাকে ব্যাপ্তি আর মন হলে থাকে চিন্তা। ব্যাপ্তি ছাড়া যেমন দেহ হয় না তেমনি চিন্তা ছাড়া মন হয় না। ব্যাপ্তির জন্য স্থান লাগে, চিন্তার জন্য লাগে না। দেকার্ত সাবস্টেন্সের এই দুই প্রধান বৈশিষ্ট্যকে বলেছিলেন এট্রিবিউট, আর পরিবর্তনশীল অন্য সব বৈশিষ্ট্যকে বলেছিলেন এই দুই এট্রিবিউটের মোড। দেকার্তের গড এক অসীম চিন্তা-সাবস্টেন্স, অন্য সব চিন্তা-সাবস্টেন্স ও ব্যাপ্তি-সাবস্টেন্স যার সৃষ্টি।

স্পিনোজা অসংখ্য সাবস্টেন্সের এই ধারণা বাতিল করে বলেছিলেন, সাবস্টেন্স একটাই, তার নাম গড। এই সাবস্টেন্স অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, অস্তিত্বের জন্যও না, ভাবনার জন্যও না। ব্যাপ্তি ও চিন্তা সাবস্টেন্সের এট্রিবিউট বা প্রধান বৈশিষ্ট্য। অস্তিত্বের দিক দিয়ে সাবস্টেন্স ও এট্রিবিউটের কোনো পার্থক্য নাই, দুইটা একই জিনিস, একসাথে থাকে। এট্রিবিউটহীন সাবস্টেন্স নাই, সাবস্টেন্সহীন এট্রিবিউট নাই। কিন্তু ভাবনার দিক দিয়ে এদের পার্থক্য আছে। আমরা সাবস্টেন্সকে তার এট্রিবিউট থেকে আলাদাভাবে ভাবতে পারি, যদিও তারা বাস্তবে এক। মোড হলো জেনারেল এট্রিবিউটের স্পেশাল এক্সপ্রেশন। মনের সব চিন্তা হলো আমার চিন্তা-এট্রিবিউটের মোড, সব কিছুর দেহ হলো ব্যাপ্তি-এট্রিবিউটের মোড। একটা এট্রিবিউটের অসংখ্য মোড থাকতে পারে। মোড হচ্ছে সাবস্টেন্স-এট্রিবিউটের বিরাজ করার নির্দিষ্ট ধরন। আমরা এখন থেকে স্পিনোজার সাবস্টেন্সকে সত্ত্ব, এট্রিবিউটকে গুণ, আর মোডকে রূপ বলব। প্রথম খণ্ড শুরু হয় আটটি সংজ্ঞা দিয়ে।

নং সংজ্ঞা
স১ স্বকৃত তাই যার এসেন্সের মধ্যে অস্তিত্ব আছে, যার স্বভাব অস্তিত্ব ছাড়া ভাবা যায় না
স২ নিজপ্রকারে সসীম তাই যাকে একই ধরনের অন্য কিছু দিয়ে সীমাবদ্ধ করা যায়
স৩ সত্ত্ব (সাবস্টেন্স) তাই যা শুধু নিজের মধ্যে থাকে, যাকে শুধু নিজের মাধ্যমে ভাবা যায়
স৪ গুণ (এট্রিবিউট) তাই সত্ত্বের এসেন্স যা দিয়ে তৈরি বলে বুদ্ধি মনে করে
স৫ রূপ (মোড) হলো সত্ত্বের প্রভাব, যা শুধু অন্যের মধ্যে থাকে, যাকে শুধু অন্যের মাধ্যমে ভাবা যায়
স৬ খোদা (গড) হলো এক পরম অসীম সত্তা, এমন এক সত্ত্ব যার অসংখ্য গুণের প্রতিটি অসীম ও চিরন্তন এসেন্স প্রকাশ করে
স৭ স্বাধীন তাই যা শুধু নিজের স্বভাবের আবশ্যিকতায় বিরাজ করে, যার সব কাজ নিজের মাধ্যমে নির্ধারিত; আবশ্যিক তাই যার অস্তিত্ব ও নির্দিষ্ট সব কাজ অন্যের মাধ্যমে নির্ধারিত
স৮ ইটার্নিটি মানে স্বয়ং অস্তিত্ব, যদি ধরে নেয়া হয় অস্তিত্ব এক চিরন্তন সত্তা থেকে আবশ্যিকভাবে আসে

স্বকৃত মানে এমন কিছু যা নিজেই নিজের কারণ, সুতরাং অস্তিত্ব তার স্বভাব। স২ নিজপ্রকারে সসীমের সংজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজপ্রকারে অসীম কি তাও বুঝিয়ে দেয়। চিন্তা নিজপ্রকারে সসীম, কারণ এক চিন্তা দিয়ে আরেক চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করা যায়, কিন্তু বস্তু দিয়ে চিন্তাকে বা চিন্তা দিয়ে বস্তুকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। এর পর আছে সত্ত্ব, গুণ ও রূপের সংজ্ঞা। গুণের সংজ্ঞার মধ্যে ‘বুদ্ধি’ (ইন্টেলেক্ট) খুব গুরুত্বপূর্ণ। সত্ত্ব-গুণ আসলে অবিচ্ছেদ্য, বুদ্ধি সত্ত্বকে যে অসংখ্য ভাবে ভাবতে পারে তার প্রতিটিই সত্ত্বের একেকটি গুণ। স৭ জানায় স্বাধীন ও আবশ্যিক কাকে বলে। যা স্বাধীন তা আবশ্যিক না, যা আবশ্যিক তা স্বাধীন না। স্বাধীন মানে একাধিক চয়েসের মধ্যে একটা বেছে নেয়া নয়, স্বাধীন মানে অন্য কোনকিছুর প্রভাব ছাড়া শুধু নিজের স্বভাবের আবশ্যিকতায় বিরাজ ও কাজ করা। একাধিক চয়েসের মধ্যে একটা যে বেছে নিতে পারে তাকে আমরা স্বাধীন না বলে স্বেচ্ছাধীন বলব। খোদা স্বাধীন কিন্তু স্বেচ্ছাধীন নন, কারণ একাধিক চয়েস থাকাটাই খোদার স্বভাবের সাথে স্ববিরোধী।

নং এক্সিয়ম
এ১ যাই আছে হয় নিজের মধ্যে আছে নয় অন্যের মধ্যে আছে
এ২ যাকে অন্যের মাধ্যমে ভাবা যায় না তাকে নিজের মাধ্যমে ভাবতে হয়
এ৩ একটা নির্দিষ্ট কারণ থেকে ফল আবশ্যিকভাবে আসে, নির্দিষ্ট কারণ না থাকলে কোনো ফল আসা অসম্ভব
এ৪ ফলের জ্ঞান তার কারণের জ্ঞানে থাকে ও তার উপর নির্ভর করে
এ৫ যাদের মধ্যে কমন কিছু নাই তাদের একটিকে দিয়ে অন্যটিকে বুঝা যায় না
এ৬ একটি সত্য আইডিয়াকে অবশ্যই তার অব্জেক্টের সাথে মিলতে হবে
এ৭ যাকে অস্তিত্বহীন ভাবা যায় তার এসেন্সের মধ্যে অস্তিত্ব নাই

সংজ্ঞার পরে স্পিনোজা সাতটি এক্সিয়ম বা স্বতঃসিদ্ধ দেন, যাদের প্রমাণ লাগে না, যারা নিজেই নিজের প্রমাণ। সংজ্ঞা কখনো প্রমাণ করতে হয় না, সংজ্ঞা কেবল যা প্রমাণ করতে চাই তার প্রকৃতি আগে পরিষ্কারভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এক্সিয়মেরও প্রমাণ থাকছে না, তবে সংজ্ঞার প্রতি সৎ থেকে এবং এক্সিয়মগুলো ব্যবহার করে স্পিনোজা তার সব প্রপজিশন প্রমাণ করবেন, বা অন্তত চেষ্টা করবেন। পড়লেই বুঝা যায় সবগুলো এক্সিয়ম আসলেই স্বতঃপ্রমাণিত। এ৪ নিয়ে একটু চিন্তা হতে পারে। ফলের জ্ঞান কারণের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে, ঠিক আছে, কিন্তু কারণের ‘জ্ঞানে থাকে’ মানে কি? স্পিনোজা আসলেই মনে করেন কারণ ও ফল একসাথে বিরাজ করে, একটা থাকলে আরেকটা থাকবেই। আমরা ফল দেখি, কিন্তু তা বুঝতে হলে কারণ বুঝতে হবে। নিখিলের কারণ খোদা, খোদাকে বুঝলেই নিখিল বুঝা যাবে। নিচে ছত্রিশটা প্রপজিশন এবং প্রতিটার প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা, এক্সিয়ম ও প্রপজিশনের নাম্বার দেয়া আছে; ‘প্র১৬ক১’ মানে প্রপজিশন-১৬’র করলারি-১; ‘ক’তে করলারি, ‘স্ক’তে স্কলিয়াম।

নং প্রপজিশন প্রমাণ
প্র১ সত্ত্ব স্বভাবের দিক দিয়ে তার সব রূপের আগে স৩, স৫
প্র২ আলাদা গুণবিশিষ্ট দুটি সত্ত্বের মধ্যে কমন কিছু নাই স৩
প্র৩ যাদের মধ্যে কমন কিছু নাই তারা একে অন্যের কারণ হতে পারে না এ৪, এ৫
প্র৪ একাধিক জিনিসকে আলাদা করা যায় হয় তাদের গুণের পার্থক্য দিয়ে নয় তাদের রূপের পার্থক্য দিয়ে স৩, স৪, স৫, এ১
প্র৫ প্রকৃতিতে একই স্বভাব বা গুণের একাধিক সত্ত্ব থাকতে পারে না এ৬, স৩, প্র১, প্র৪
প্র৬ এক সত্ত্ব থেকে আরেক সত্ত্ব তৈরি হতে পারে না প্র২, প্র৩, প্র৫
প্র৬ক একটি সত্ত্ব অন্য কোনকিছু থেকেই তৈরি হতে পারে না স৩, স৫, এ১, প্র৬
প্র৭ সত্ত্বের স্বভাবেই অস্তিত্ব আছে স১, প্র৬ক
প্র৮ প্রত্যেক সত্ত্ব অবশ্যই অসীম স২, প্র৫, প্র৭
প্র৯ যার বাস্তবতা যত বেশি তার গুণ তত বেশি স৪
প্র১০ একটি সত্ত্বের প্রতিটি গুণ শুধু সে-গুণের মাধ্যমে ভাবা যায় স৩, স৪, স৬
প্র১০স্ক দুইটা গুণ আলাদাভাবে ভাবা যায় মানে এই না যে তারা দুইটা আলাদা সত্তা বা সত্ত্ব বানাতে পারে প্র১০
প্র১১ খোদা—এমন এক সত্ত্ব যার অসংখ্য গুণের প্রতিটি চিরন্তন ও অসীম এসেন্স প্রকাশ করে—অবশ্যই আছেন স৬, এ৭, প্র২, প্র৭
প্র১২ একটি সত্ত্বের এমন কোনো গুণ ভাবা সম্ভব না যা থেকে মনে হয় সত্ত্বটি বিভাজ্য স৪, প্র২, প্র৫, প্র৬, প্র৭, প্র৮, প্র১০
প্র১৩ যে-সত্ত্ব পরম অসীম তা অবিভাজ্য প্র৫, প্র৮, প্র১১, প্র১২
প্র১৪ খোদা ছাড়া আর কোনো সত্ত্ব নাই বা ভাবা যায় না স৬, এ১, প্র৫, প্র১০, প্র১১
প্র১৪ক১ খোদা অনন্য, প্রকৃতিতে খোদা ছাড়া আর কিছু নাই স৬, প্র১০স্ক
প্র১৪ক২ সব ব্যাপ্ত জিনিস বা চিন্তক জিনিস হয় খোদার গুণ নয় রূপ এ১
প্র১৫ যাই আছে খোদার মধ্যে আছে, খোদা ছাড়া কিছু নাই বা ভাবা যায় না স৩, স৫, এ১, প্র১৪
প্র১৬ খোদার স্বভাবের আবশ্যিকতা থেকে অসংখ্য রূপে অসংখ্য জিনিস আসে স৬
প্র১৭ খোদা শুধু তার স্বভাবের সূত্র অনুযায়ী কাজ করেন, অন্য কিছু দিয়ে চালিত হন না প্র১৫, প্র১৬
প্র১৮ খোদা সবকিছুর অন্তর্নিহিত কারণ, বহির্ভূত কারণ না স৩, প্র১৪, প্র১৫, প্র১৬ক১
প্র১৯ খোদা চিরন্তন, মানে তার সব গুণ চিরন্তন স৪, স৬, প্র৭, প্র১১
প্র২০ খোদার অস্তিত্ব আর এসেন্স এক এবং অভিন্ন স৪, প্র১৯
প্র২১ খোদার যেকোনো গুণের পরম স্বভাব থেকে যা আসে সব অবশ্যই চিরন্তন ও অসীম ছিল এবং আছে স২, প্র১১, প্র২০ক২
প্র২২ খোদার কোনো গুণ থেকে কোনো রূপের (যা এই গুণের বরাতে অবশ্যই চিরন্তন ও অসীম) হাতে রূপায়িত হওয়ার মাধ্যমে যা আসে তার অস্তিত্বও আবশ্যিক ও অসীম স২, প্র১১, প্র২০ক২
প্র২৩ অসীম ও আবশ্যিকভাবে থাকা প্রতিটি রূপ হয় খোদার কোনো গুণের পরম স্বভাব থেকে এসেছে, নয় কোনো গুণের আবশ্যিক ও অসীম রূপায়ণ থেকে এসেছে স৫, স৬, স৮, প্র১৫, প্র১৯, প্র২১, প্র২২
প্র২৪ খোদার বানানো কোনো জিনিসের এসেন্সের মধ্যে অস্তিত্ব নাই স১, প্র১৪ক১
প্র২৫ খোদা কার্যকরী কারণ সবকিছুর শুধু অস্তিত্বের না, এসেন্সেরও স৫, এ৪, প্র১৫, প্র১৬
প্র২৫ক নির্দিষ্ট সব জিনিস খোদার গুণের প্রভাব, বা খোদার গুণ প্রকাশের নির্দিষ্ট উপায় অর্থাৎ রূপ স৫, প্র১৫
প্র২৫স্ক খোদা যেভাবে নিজের কারণ সেভাবেই সবকিছুর কারণ প্র১৬
প্র২৬ যে একটা ফল দিতে নির্ধারিত তাকে সেজন্য নির্ধারণ করেছেন খোদা, যে খোদার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়নি সে নিজে নিজেকে কোনো ফল দিতে নির্ধারণ করতে পারে না প্র১৬, প্র২৫
প্র২৭ খোদা যাকে কোনো ফল দিতে নির্ধারণ করেছেন সে নিজেকে অনির্ধারিত করতে পারে না এ৩
প্র২৮ যেকোনো সসীম ও নির্ধারিত জিনিস থাকে ও ফল দেয় কেবল এই জন্য যে তার থাকা ও ফলন কোনো এক সসীম ও নির্ধারিত কারণ দিয়ে নির্ধারিত, এবং এই সসীম ও নির্ধারিত কারণ থাকে ও ফল দেয় কেবল এই জন্য যে তার থাকা ও ফলন আরেকটি সসীম ও নির্ধারিত কারণ দিয়ে নির্ধারিত, এবং এই দ্বিতীয় কারণ তৃতীয় আরেক কারণ দিয়ে নির্ধারিত, এবং এই পরম্পরা অনন্ত স৩, স৫, এ১, প্র১৫, প্র২১, প্র২২, প্র২৪ক, প্র২৫ক, প্র২৬
প্র২৯ প্রকৃতিতে আকস্মিক কিছু নাই, সবকিছু খোদায়ী স্বভাবের আবশ্যিকতা দিয়ে থাকা ও নির্দিষ্ট ফল দেয়ার জন্য নির্ধারিত প্র১১, প্র১৪ক১, প্র১৫, প্র১৬, প্র১৭ক২, প্র২১, প্র২৪ক, প্র২৬, প্র২৭, প্র২৮
প্র৩০ সসীম বা অসীম বাস্তব বুদ্ধি খোদার গুণ ও রূপ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না এ৬, প্র১৪ক১, প্র১৫
প্র৩১ সসীম বা অসীম বাস্তব বুদ্ধি, ইচ্ছা কামনা প্রেম ইত্যাদির মতোই, সম্পর্কিত সৃষ্ট প্রকৃতির সাথে, স্রষ্টা প্রকৃতির সাথে না স৫, স৬, প্র১৫, প্র২৯স্ক
প্র৩২ ইচ্ছা কোনো স্বাধীন কারণ নয়, কেবল আবশ্যিক কারণ স৭, প্র২৩, প্র২৮, প্র২৯
প্র৩৩ সবকিছু খোদার মাধ্যমে যেভাবে তৈরি হয়েছে তাছাড়া অন্য কোনোভাবে তৈরি হতে পারত না স৭, প্র১১, প্র১৪ক১, প্র১৬, প্র১৭স্ক, প্র২৯
প্র৩৪ খোদার ক্ষমতাই তার এসেন্স প্র১১, প্র১৬, প্র১৬ক
প্র৩৫ খোদার ক্ষমতার মধ্যে আমরা যাকিছু ভাবতে পারি সব অবশ্যই আছে প্র৩৪
প্র৩৬ এমন কিছু নাই যার স্বভাব থেকে প্রভাব আসে না প্র১৬, প্র২৫ক, প্র৩৪

প্রপজিশনগুলো একটু ভেঙে ভেঙে বুঝতে হবে, ব্লক ব্লক করে। প্রথম পাঁচটি প্রপজিশনের বিষয় সত্ত্বের প্রকৃতি। সত্ত্ব অবশ্যই তার রূপের আগে, সংজ্ঞা ৩ ও ৫ থেকে যা প্রমাণিত। দুটি সত্ত্বের গুণ আলাদা হলে তাদের মধ্যে কমন কিছুই থাকতে পারে না, সত্ত্ব ও গুণের সংজ্ঞা থেকে এটা প্রমাণ করা যায়। কারণ ও ফলের এক্সিয়ম (৪, ৫) প্রমাণ করে, যারা ভিন্ন তারা একে অন্যের কারণ হতে পারে না। প্র১ ও প্র৪ ইউজ করে প্র৫ প্রমাণ করা যায়। একই স্বভাব বা গুণের দুইটা আলাদা সত্ত্ব যদি ধরি, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্য করার একমাত্র উপায় রূপ (প্র৪), যেহেতু আগেই বলেছি গুণ এক। কিন্তু রূপ আলাদা হলে তাদেরকে আলাদা সত্ত্ব বলা যায় না কারণ সত্ত্ব তার সব রূপের আগে (প্র১)। সুতরাং একই গুণের দুই সত্ত্ব থাকা অসম্ভব, অর্থাৎ প্রতিটা সত্ত্বের গুণ ইউনিক। কেউ ভাবতে পারেন, একই গুণের দুইটা সত্ত্ব দুইটা আলাদা জায়গায় বা সময়ে থাকলে সমস্যা কি? সমস্যা হলো, সত্ত্ব স্থানকালে থাকে না, বরং স্পেসটাইম নিজেই সত্ত্বের একটা রূপ। সত্ত্ব স্থানকালের ঊর্ধ্বে।

প্রপজিশন ৬–১১ খোদার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। একটা সত্ত্ব অন্য কিছু থেকেই জন্মাতে পারে না, অতএব সে স্বকৃত স্বয়ম্ভূ, মানে তার স্বভাবেই অস্তিত্ব আছে (প্র৭)। সত্ত্বকে অসীমও হতে হবে, কারণ অসীম না হলে তাকে একই ধরনের অন্য কিছু দিয়ে সীমাবদ্ধ করা যাবে, যা অসম্ভব, কারণ একই ধরনের (গুণের) একাধিক সত্ত্ব নাই। একটি সত্ত্বের একাধিক গুণ থাকতে পারে, যত বেশি গুণ তত বেশি বাস্তবতা কারণ এসেন্স তত সমৃদ্ধ, তবে প্রতিটি গুণ স্বয়ংসম্পূর্ণ, এক গুণ আরেক গুণ দিয়ে ভাবা যায় না। এর পর প্র১১ জানায়, খোদা অবশ্যই আছেন, কারণ তিনি অসংখ্য গুণে গুণান্বিত এক সত্ত্ব যার প্রতিটি গুণ অসীম ও চিরন্তন এসেন্স প্রকাশ করে। এর প্রমাণ আন্সেল্ম ও দেকার্তের মতো অন্টলজিকেল না বরং সাবস্টেনশিয়াল, কারণ স্পিনোজা খোদার ধারণা দিয়ে খোদা প্রমাণ করেননি, সত্ত্বের (সাবস্টেন্স) ধারণা দিয়ে খোদা প্রমাণ করেছেন। প্রমাণ কি? প্রমাণ তিনটা, প্রথমটা ভাবনা, দ্বিতীয়টা কারণ ও তৃতীয়টা ক্ষমতার ধারণা ইউজ করে।

  1. ভাবনা: ভাবো যে খোদা নাই, অতএব এ৭ অনুযায়ী তার এসেন্সে অস্তিত্ব নাই, কিন্তু প্র৭ অনুযায়ী তা অসম্ভব, কারণ খোদা সত্ত্ব।
  2. কারণ: যেকোনো জিনিস থাকা বা না-থাকার ‘কারণ’ লাগে। কারণটা হয় সে-জিনিসের ভিতরে নয় বাহিরে থাকে। খোদার না-থাকার কারণ তার ভিতরে থাকতে পারে না, যেহেতু তা খোদার স্বভাববিরোধী, বাহিরে থাকলে তা খোদার অস্তিত্ব ঠেকাতে পারবে না কারণ (প্র৩) ভিন্ন রকমের এক জিনিস আরেক জিনিসকে প্রভাবিত করতে পারে না। আর খোদা ‘থাকার’ কারণ তার ভিতরে থাকতে পারে, তবে বাহিরে থাকতে পারে না উপরের কারণেই।
  3. ক্ষমতা: সত্ত্ব আসলে ‘জিনিস’ না বরং ‘ক্ষমতা,’ নিজের অস্তিত্ব বাস্তবায়নের ক্ষমতা (প্র৭)। কোনো সত্ত্বের সসীম সংখ্যক গুণ থাকলে সে সম্ভাব্য সব গুণের সাপেক্ষে বাস্তব না, কিন্তু অসংখ্য গুণ থাকলে সব গুণের সাপেক্ষেই বাস্তব। আমাদের মতো সসীম জিনিসের থাকার ক্ষমতা আছে, আমরা তা অনুভব করি, প্রত্যক্ষ করি। অতএব অসীম গুণের কিছু একটা না থাকতে পারেই না, কারণ সেক্ষেত্রে সসীমের থাকার ক্ষমতা অসীমের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে যা অসম্ভব। এই প্রমাণটা এপস্টেরিয়রি, আগের দুইটার মতো এপ্রায়রি না।

অতএব অসংখ্য গুণের সত্ত্ব না থেকে উপায় নেই। যতভাবে বাস্তব হওয়া সম্ভব এই সত্ত্ব ততভাবেই বাস্তব। এবং এই সত্ত্বের নামই খোদা, খোদা স্বয়ং অস্তিত্ব, বাস্তবায়নের ক্ষমতা। কেউ বলতে পারে, একে সত্ত্ব বললেই হয়, খোদা বলার কি দরকার, এই সত্ত্বই কেন খোদা? কারণ খোদার এই সংজ্ঞাই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ধর্মে খোদার সবচেয়ে মৌলিক ও সবচেয়ে স্বসংগত ধারণাগুলোর সাথে মিলে। যুগের জ্বালায় স্পিনোজা নিজে ইব্রাহিমি ধর্মের খোদাকে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু ইবনে আরাবির উজুদের সাথে স্পিনোজার সত্ত্বের মিল অন্ধও দেখতে পাবে। সত্ত্ব-উজুদের সাথে হিন্দু ব্রহ্ম, বৌদ্ধ স্বভাবশূন্যতা আর চাইনিজ দাও তুলনা করাই যথেষ্ট।

প্রপজিশন ১২–১৫ খোদার অনন্যতা ও সার্বিকতা প্রমাণ করে। খোদা আছেন শুধু তাই না, খোদা ছাড়া আর কিছু নাই। যদি থাকে তবে তার অন্তত একটা গুণ খোদার থেকে আলাদা হতে হবে যা অসম্ভব, কারণ সম্ভাব্য সব গুণই খোদার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। সুতরাং সবকিছুই খোদার মধ্যে আছে, খোদা ছাড়া কিছু নাই, কিছু ভাবা যায় না, যা প্র১২ ও প্র১৩’র বিরোধী মনে হতে পারে। বাস্তবতার দিকে তাকালে আমরা অসংখ্য আলাদা আলাদা জিনিস দেখি বা চিন্তা করি, এই সবকিছু যদি খোদার অংশ হয় তবে তো তিনি বিভাজ্য, অসংখ্য খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিরাজ করছেন। আসলে না। কারণ আমরা আলাদা যাকিছু দেখি সব খোদার ব্যাপ্তি ও চিন্তা গুণের রূপ, রূপ সত্ত্বের প্রকাশমাত্র, সত্ত্ব না। যত রূপেই খোদাকে দেখি না কেন তিনি আসলে এক ও অবিভাজ্য, কারণ তিনি গুণ না, রূপ না, তিনি সত্ত্ব। প্র১৪’র করোলারি জানায়, বাস্তবতার সবকিছু খোদার গুণ বা রূপ, কিন্তু কোনকিছুই তার পরম একত্বকে বাতিল করে না। ইসলাম ধর্মেও খোদার ভিত্তি একত্ব, তাওহিদ।

প্রপজিশন ১৬–২০ খোদার সাথে তার রূপগুণের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে। খোদার স্বভাবই এমন যে তার থেকে অসংখ্য রূপে অসংখ্য জিনিস আসে, প্রকাশিত হয়, প্রবাহিত হয়। খোদা স্বাধীন (প্র১৭) কিন্তু স্বেচ্ছাধীন না, কারণ একাধিক চয়েসের মধ্যে বেছে নেয়ার ধারণাই খোদার স্বভাবের পরিপন্থী। খোদা শুধু তার স্বভাবের সূত্র অনুযায়ী কাজ করেন। তার চয়েস বলে কিছু নাই। খোদার অসংখ্য গুণের প্রতিটার আছে অসংখ্য রূপ। সত্ত্বগুণ সব রূপের আগে, যে-কারণে খোদার একত্ব বাতিল হয় না। তার মানে এই না যে খোদা নিখিল জগতের বাহ্যিক বা বহির্ভূত কোনো কারণ, খোদার ‘বাইরে’ কিছু আছে কল্পনা করাটাই সত্ত্বের ধারণার পরিপন্থী। কবওয়েব থেকে কসমিক ওয়েব পর্যন্ত সবকিছুই খোদার গুণের রূপ বা তার স্বভাবের প্রভাব। রূপ হিসেবে ভাবলে আমাদেরকে খোদার ‘বৈশিষ্ট্য’ মনে হয় যেভাবে ‘কালো’ আমার ত্বকের বৈশিষ্ট্য। প্রভাব হিসেবে ভাবলে আমাদেরকে খোদার ‘ফল’ মনে হয়, যেভাবে ঢিল মারার ফল হয় ভাঙা কাঁচ। কালো আমার ভিতরে, ঢিল কাঁচের বাহিরে। কোন উপমা বেশি সঠিক? খোদা অন্তর্নিহিত কারণ হলে আমরা তার বৈশিষ্ট্য, কিন্তু রক্তমাংসের মূর্ত জিনিস কিভাবে কারো বৈশিষ্ট্য হয়, বৈশিষ্ট্য তো বিমূর্ত জিনিস। আবার খোদা কেবল আমাদের ‘কারণ’ হলে তাকে তার প্রভাবের বহির্ভূত মনে হয় যা স্পিনোজা অস্বীকার করেছেন। সমাধান একটাই। এই দুই বিপরীত ধারণা একসাথে করে আমরা বলি, খোদা নিখিলের ‘অন্তর্নিহিত কারণ’ যেভাবে আমি আমার মুখের সব এক্সপ্রেশনের অন্তর্নিহিত কারণ। সবকিছু একইসাথে খোদার রূপ ও প্রভাব। যেদিকেই তাকাও দেখবে খোদার চেহারা।

পরের পাঁচটি প্রপজিশন (২১–২৫) রূপের ধারণা দিয়ে আমাদের ফিজিকেল ও মানসিক ইউনিভার্স বানানোর চেষ্টা করে। খোদার পরম গুণ থেকে যা আসে সব চিরন্তন ও অসীম। সুতরাং গুণ থেকে সরাসরি প্রকাশিত সব রূপ চিরন্তন ও অসীম যাদেরকে বলব ‘প্রাথমিক’ অসীম রূপ (প্র২১)। প্র২২ বলে, কোনো গুণ থেকে একটা রূপের মাধ্যমে রূপায়িত (পরিবর্তিত) হয়ে যা আসে তাও আবশ্যিক চিরন্তন ও অসীম, এদেরকে বলব ‘মাধ্যমিক’ অসীম রূপ কারণ এদের জন্ম প্রাথমিক রূপের মধ্যস্থতায়। পরের দুই প্রপজিশন জানায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অসীম রূপের এসেন্সের মধ্যে অস্তিত্ব নাই, তাদের অস্তিত্বের কারণ তারা নিজেরা না বরং খোদা। খোদার ব্যাপ্তিগুণ থেকে যে প্রাথমিক রূপ আসে তার নাম অসীম গতি, আর চিন্তাগুণ থেকে আসা প্রাথমিক রূপ অসীম বুদ্ধি। অসীম গতি থেকে যে মাধ্যমিক অসীম রূপ আসে তা হলো ফিজিকেল জগতের মৌলিক নিয়মনীতি, অর্থাৎ ইউনিভার্সের গতির সব সূত্র। আর অসীম বুদ্ধি থেকে যে মাধ্যমিক অসীম রূপ আসে তা হলো মানসিক জগতের নিয়মনীতি, অর্থাৎ যুক্তির সব সূত্র। অসীম গতিসূত্র অনুসারে যে অসীম সংখ্যক ফিজিকেল বস্তুর জন্ম হয় তারা প্রত্যেকে সসীম রূপ, কিন্তু তাদের একটা অসীম পরম্পরা আছে আমাদের জানামতে কোয়ার্ক থেকে পুরা ইউনিভার্স পর্যন্ত। যত ছোটোর দিকেই যাই আরো ছোট বস্তু পাই, যত বড়র দিকেই যাই আরো বড় বস্তু পাই, কিন্তু সবাই এক অসীম সূত্রে গাঁথা। একইভাবে অসীম যুক্তিসূত্র অনুসারে যে অসীম সংখ্যক মানসিক জিনিস তথা চিন্তার জন্ম হয় তারা প্রত্যেকে সসীম রূপ, কিন্তু তাদেরও একটা অসীম পরম্পরা আছে। ফিজিকেল পদার্থের মতোই মানসিক আইডিয়া একে অপরের সাথে এক একক পরম্পরায় সম্পর্কিত। যেমন, হয়ত যেকোনো যুক্তি থেকে শুরু করে সেই যুক্তির আগের সব কারণ খোঁজা যায়, আবার পরের সব ফলও খোঁজা যায়। এই অসীম পরম্পরা থাকার কারণেই সসীম বিচ্ছিন্ন (ডিস্ক্রিট) সব রূপকে এক অসীম অবিচ্ছিন্ন (কন্টিনুয়াস) রূপের অংশ হিসেবে দেখা যায়। অসীম অবিচ্ছিন্ন রূপ যদি সমুদ্রের সার্ফেস হয় তবে সসীম বিচ্ছিন্ন রূপগুলো তার ঢেউ।

শেষ প্রপজিশনগুলোর (২৬–৩৬) বিষয় কারণ ও ফল। প্র২৬ থেকে প্র২৮ পড়লে মনে হয়, খোদা সব জিনিসের কারণ, কিন্তু সসীম রূপগুলো নিজেরাও নিজেদের কারণ।

এথিক্স ২: মন ও মানুষ

নং সংজ্ঞা
স১ বস্তু (বডি) এমন এক রূপ যা এক নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত উপায়ে ব্যাপ্তি হিসেবে বিবেচিত খোদার এসেন্স প্রকাশ করে
স২ কোনো জিনিসের এসেন্সের মধ্যে তাই আছে যা দিলে জিনিসটা থাকে আর নিয়ে নিলে চলে যায়, অর্থাৎ যা ছাড়া জিনিসটা থাকে না বা ভাবা যায় না, এবং জিনিসটা ছাড়া যা থাকে না বা ভাবা যায় না
স৩ আইডিয়া মনের এমন ধারণা যা মন তৈরি করে কারণ সে চিন্তাশীল জিনিস
স৪ পর্যাপ্ত আইডিয়া তাই যাকে কোনো অব্জেক্ট ছাড়া শুধু তার নিজের মাধ্যমে বিচার করলে তার মধ্যে একটি সত্য আইডিয়ার সব ধর্ম বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়
স৫ ডিউরেশন হলো অস্তিত্বের অনির্দিষ্ট টিকে থাকা
স৬ বাস্তবতা ও পার্ফেকশন আমার কাছে একই জিনিস
স৭ আলাদা জিনিস মানে সসীম এমন কিছু যার নির্দিষ্ট অস্তিত্ব আছে; যদি একাধিক আলাদা জিনিস একসাথে এমন কাজ করে যে তারা সবাই একটা ফলের একক কারণ, তবে সেদিক থেকে তাদের সবাই একটা একক জিনিস
নং এক্সিয়ম
এ১ মানুষের এসেন্সে আবশ্যিক অস্তিত্ব নাই, অর্থাৎ প্রকৃতির বিন্যাস এমন যে নির্দিষ্ট কোনো মানুষ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে
এ২ মানুষ চিন্তা করে
এ৩ যার চিন্তা করা হচ্ছে চিন্তকের মনে তার আইডিয়া না থাকলে চিন্তাটার রূপও থাকতে পারে না, ভালোবাসা কামনা বা মনের অন্য কোনো প্রভাব থাকতে পারে না যদি যাকে ভালোবাসা কামনা বা অন্য কিছু করা হচ্ছে তার আইডিয়া চিন্তকের মনে না থাকে; তবে চিন্তার অন্য কোনো রূপ না থাকলেও আইডিয়া থাকতে পারে
এ৪ আমরা অনুভব করি যে একটা বস্তু অনেকভাবে প্রভাবিত হতে পারে
এ৫ চিন্তার রূপ ও বস্তু ছাড়া আমরা সৃষ্ট প্রকৃতির আর কোনো আলাদা জিনিস অনুভব বা প্রত্যক্ষ করতে পারি না
নং প্রপজিশন প্রমাণ
প্র১ চিন্তা খোদার একটি গুণ, অর্থাৎ খোদা চিন্তাশীল জিনিস ১স৪, ১স৫, ১স৬, ১প্র২৫ক
প্র২ ব্যাপ্তি খোদার একটি গুণ, অর্থাৎ খোদা ব্যাপ্ত জিনিস ১স৪, ১স৫, ১স৬, ১প্র২৫ক
প্র৩ খোদার মধ্যে অবশ্যই তার এসেন্স এবং সে-এসেন্স থেকে আবশ্যিকভাবে আসা সবকিছুর একটা আইডিয়া আছে প্র১, ১প্র১৫, ১প্র১৬, ১প্র৩২ক, ১প্র৩৫
প্র৪ খোদার আইডিয়া—যা থেকে অসংখ্য রূপে অসংখ্য জিনিস আসে—নিশ্চয়ই ইউনিক ১প্র১৪ক১, ১প্র৩০
প্র৫ আইডিয়ার ফর্মাল অস্তিত্বের কারণ হতে পারে শুধু চিন্তক হিসেবে বিবেচিত খোদা, অন্য কোনো গুণে পরিচিত খোদা নয়; অর্থাৎ খোদার গুণের ও সব আলাদা জিনিসের আইডিয়ার কার্যকর কারণ তাদের কোনো অব্জেক্ট বা প্রত্যক্ষ কোনো জিনিস হতে পারে না, হতে পারে শুধু চিন্তক হিসেবে চিহ্নিত খোদা ১এ৪, ১প্র২৫ক, ১প্র১০, প্র৩
প্র৬ একটি গুণের সব রূপের কারণ খোদা কেবল তখনি যখন খোদাকে সেই গুণের মাধ্যমে ভাবা হয়, অন্য কোনো গুণ দিয়ে নয় ১এ৪, ১প্র১০
প্র৭ সব আইডিয়ার বিন্যাস ও সংযোগ আর সব আলাদা জিনিসের বিন্যাস ও সংযোগ একই ১এ৪
প্র৮ যেসব আলাদা জিনিস বা রূপের অস্তিত্ব নাই তাদের আইডিয়া ভাবতে হয় খোদার অসীম আইডিয়ার মধ্যে, যেভাবে আলাদা জিনিস বা রূপের ফর্মাল এসেন্স থাকে খোদার গুণের মধ্যে প্র৭
প্র৯ যে আলাদা জিনিসের অস্তিত্ব আসলে আছে তার আইডিয়ার একটি কারণ খোদা, যেখানে খোদাকে অসীম হিসেবে ভাবা হচ্ছে না বরং অস্তিত্বশীল অন্য একটি আলাদা জিনিসের আইডিয়া দিয়ে প্রভাবিত ভাবা হচ্ছে, এবং এই দ্বিতীয় আইডিয়ার কারণও খোদা যেখানে তাকে তৃতীয় আরেকটি আইডিয়া দিয়ে প্রভাবিত ভাবা হচ্ছে, এবং এই পরম্পরা অনন্ত। ১প্র২৮, প্র৬, প্র৭, প্র৮
প্র১০ সত্ত্বের অস্তিত্ব মানুষের এসেন্সের ভিতরে নাই, অর্থাৎ সত্ত্ব মানুষের আদল বানায় না ১প্র৫, ১প্র৭, স২, এ১
প্র১১ মানুষের মনের বাস্তব অস্তিত্ব প্রথমত যা দিয়ে তৈরি তা হলো বাস্তব অস্তিত্ব আছে এমন একটি আলাদা জিনিসের আইডিয়া ১প্র২১, ১প্র২২, এ১, এ২, ২৩, প্র৮ক, প্র১০ক

রেফারেন্স

  1. স্টিভেন ন্যাডলার, স্পিনোজা’স এথিক্স: এন ইন্ট্রোডাকশন, কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৬।
  2. বেথ লর্ড, স্পিনোজা’স এথিক্স: এন এডিনব্রা ফিলোসফিকেল গাইড, এডিনব্রা ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১০।
  3. স্পিনোজা, অনু. এডুইন কার্লি, এ স্পিনোজা রিডার: দি এথিক্স এন্ড আদার ওয়ার্কস, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৪।
  4. স্পিনোজা, অনু. স্যামুয়েল শার্লি, স্পিনোজা: কমপ্লিট ওয়ার্কস, হ্যাকেট পাব্লিশিং কোম্পানি, ২০০২।
om/spinoza.txt · Last modified: 2024/04/15 07:36 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki