পৃথিবীর গোল পৃষ্ঠকে যেমন আমরা অনেক দেশে ভাগ করেছি এবং প্রত্যেক দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করেছি ল্যাটিচুড ও লঙ্গিচুড দিয়ে, তেমনি আমাদের দেখা আকাশের তলকেও ভাগ করা হয়েছে মোট ৮৮টা কনস্টেলেশনে। প্রতিটা কনস্টেলেশনের সীমানাও চিহ্নিত করা হয়েছে ল্যাটিচুডের মতো ডিক্লাইনেশন আর লঙ্গিচুডের মতো রাইট-এসেনশন দিয়ে। প্রতিটা কনস্টেলেশন কিছু তারার আপাত জ্যামিতিক বিন্যাস, এই কারণে এদেরকে বাংলায় তারামণ্ডল বলা হয়। একটা তারামণ্ডলের কোনো তারা আমাদের অনেক কাছের আর কোনোটা অনেক দূরের হতে পারে, কিন্তু আমাদের আকাশে তাদেরকে সব সময় পাশাপাশি দেখা যায় বলেই আমরা তাদেরকে এক কনস্টেলেশনে কল্পনা করে এসেছি অনেক হাজার বছর ধরে।

ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিকেল ইউনিয়ন সেলেস্টিয়াল স্ফিয়ারকে (নভোগোলক) মোট ৮৮টা কনস্টেলশনে ভাগ করেছে। পৃথিবীর সব দেশের জন্য যেমন আছে জাতিসংঘ (ইউএন) তেমনি আকাশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আছে আইএইউ। পৃথিবীর গোল পৃষ্ঠ যেমন একটা সমতল মানচিত্রের মাধ্যমে দুই মাত্রায় দেখানো যায়, তেমনি আকাশের গোল তলকেও নিচে দুই মাত্রার সমতল মানচিত্রে আটাশি অঞ্চলে ভাগ করে দেখানো হয়েছে।

পৃথিবীর ম্যাপে যেমন এক্স-এক্সিসে লঙ্গিচুড আর ওয়াই-এক্সিসে ল্যাটিচুড থাকে তেমনি উপরের ম্যাপে এক্স-এক্সিসে আছে রাইট এসেনশন আর ওয়াই-এক্সিসে ডিক্লাইনেশন। ডিক্লাইনেশন ইকুয়েটরের উত্তরে ০ থেকে +৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়, আর দক্ষিণে ০ থেকে -৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর লঙ্গিচুড গ্রিনিচ থেকে পূর্বে ১৮০ ডিগ্রি আর পশ্চিমে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। কিন্তু আকাশের রাইট এসেনশন মাপা হয় ০ থেকে একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত। পৃথিবী যেহেতু ২৪ ঘণ্টায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে সেহেতু ডিগ্রিকে ঘণ্টা দিয়েও মাপা যায়। এক ঘণ্টায় পৃথিবী ১৫ ডিগ্রি ঘুরে বলে ১ ঘণ্টা ১৫ ডিগ্রির সমান, আর সেই হিসেবে ২৪ ঘণ্টা ৩৬০ ডিগ্রি সমান। এই ম্যাপের এক্স-এক্সিসে রাইট এসেনশন লঙ্গিচুডের মতো ডিগ্রিতে না দেখিয়ে ঘণ্টায় দেখানো হয়েছে। একেবারে ডান কোণায় ০ ঘণ্টা, আর বাম কোণায় ওয়াই-এক্সিসের কাছে রাইট এসেনশন ২৪ ঘণ্টা।

নিচে সবগুলি কনস্টেলেশনের ডেটা দেয়া হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশটির মতো কনস্টেলেশনের ট্রেডিশনাল বাংলা নাম প্রচলিত আছে হাজার বছর ধরে, কিন্তু আমরা আধুনিক ইংলিশ নামগুলিই বাংলায় গ্রহণ করেছি। ইংলিশের পাশাপাশি বাংলা নাম দেয়া হয়েছে উচ্চারণ কিভাবে করতে হয় তা বুঝানোর জন্য। এর পর দেখানো হয়েছে সংক্ষিপ্ত রূপ আর জেনিটিভ। তারার নাম রাখার জন্য অনেক সময় এই সব জেনিটিভ কাজে লাগে, তাই জেনিটিভগুলো কিভাবে উচ্চারণ করতে হয় তা জানার একটা উপায়ও থাকা দরকার। এর পর আছে প্রত্যেক কনস্টেলেশনের এরিয়া এবং এক প্রান্তের স্থানাংক, অর্থাৎ রাইট এসেনশন ও ডিক্লাইনেশন। একটা স্ফিয়ারের সার্ফেসকে মোট আটটা কোয়াড্রেন্টে ভাগ করা যায়, এবং শেষ কলামে দেখানো হয়েছে কোন কনস্টেলেশন প্রধানত কোন কোয়াড্রেন্টে পড়ে; NQ1 মানে নর্থ কোয়াড্রেন্ট ১, SQ2 মানে সাউথ কোয়াড্রেন্ট ২।